রাজশাহীতে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়ায়, ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর আত্মহত্যার চেষ্টা

রাজশাহীতে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়ায়, ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর আত্মহত্যার চেষ্টা

রাজশাহীতে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়ায়, ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর আত্মহত্যার চেষ্টা
রাজশাহীতে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়ায়, ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর আত্মহত্যার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে ধর্ষণ মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়ায় ও আসামিপক্ষের লোকজন কটূক্তি করায় ধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূ (২৪) আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। গত রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে ২৫টি ঘুমের ওষুধ ও হারপিক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানাধিন বৌবাজার এলাকায়।

ওই রাতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আত্মহত্যার আগে ওই গৃহবধূ দুই পাতার একটি চিরকুট লিখেছেন। এতে তিনি আসামিপক্ষের লোকজনের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।

এর আগে (গত ১৮ জানুয়ারি) দুই সন্তানের জননী ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি ধর্ষণের মামলা করেন। মামলায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের তৎকালীন স্টেশন মাস্টার মঈন উদ্দিন আজাদকে (৪২) আসামি করা হয়। এরপর ৩ ফেরুয়ারি নাটোর থেকে আজাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ট্রেনে যাতায়াতের সময় স্টেশন মাস্টার আজাদের সঙ্গে নারীর পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথা হতো। আজাদ ওই নারীকে রেলওয়েতে একটি চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছিলেন। চাকরির প্রস্তুতির বই দেয়ার নামে (১৭ জানুয়ারি) আজাদ ওই নারীকে তার বাসায় ডাকেন। ওই নারী গেলে ফাঁকা বাসায় আজাদ তাকে ধর্ষণ করেন। পরদিন ওই নারী মামলা করেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে রামেক হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওই গৃহবধূ মেঝেতে ঘুমাচ্ছেন। তার সঙ্গে মা, ফুফু ও স্বামী ছিলেন। তারা জানান, গত রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে ভাড়া বাসায় ২৫টি ঘুমের ওষুধ সেবনের পাশাপাশি হারপিক পান করেন ওই গৃহবধূ। অনেক ডেকেও সাড়া না পেয়ে পুলিশে ফোন করা হয়। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে দ্রুত রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

তারা আরও জানান, আসামি এখনও কারাগারে আছেন। গত শনিবার আদালতে এ মামলার ধার্য্য দিন ছিল। সেখানে আসামিপক্ষের লোকজন এই গৃহবধূকে কটূক্তি করেন। আর আরমান আলী নামের এক ব্যক্তি আসামি আজাদের পক্ষ থেকে মামলাটি মীমাংসা করে নেয়ার চাপ দিচ্ছিলেন। আসামির ভগ্নিপতি রেল কর্মচারী মনোয়ার হোসেন মনু মিয়াও গৃহবধূর নামে এলাকায় নানা ধরনের বাজে কথা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এসব সহ্য করতে না পেরে গৃহবধূ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন।

ওই নারীর স্বামী তাদের কাছে থাকা একটি চিরকুট দেখান। এটি তার স্ত্রীর লেখা বলে তিনি দাবি করেন। চিরকুটে ধর্ষণের মামলা করায় নানা কটূক্তির কথা উল্লেখ করা আছে। থানার ওসি স্নেহ করায় এটাকে খারাপ সম্পর্ক বলে আসামিপক্ষ প্রচার করছে বলেও চিরকুটে লেখা হয়েছে। যারা এসব কটূক্তি করছেন তারা যেন ছাড় না পান সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া নিজের দুই সন্তানকে দেখে রাখার জন্য স্বামী ও মায়ের কাছে আকুতি জানিয়েছেন ওই গৃহবধূ।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, ধর্ষণের মামলার পর আসামি গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। সেটি পাওয়া গেলে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। এরই মধ্যে মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রামেকে তাকে ছুটি দিয়েছে বওেল শুনেছি। তবে গৃহবধূর থানায় এসে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওসি।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply